
বিডি২৪লাইভ
একজন নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করার অধিকার বিমানবাহিনীকে কে দিলো? মেরে ফেলেও ওরা থামছে না। এছাড়া বিভিন্নভাবে আমার ভাইকে নিয়ে নাটক সাজানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার শহরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিতে নিহত শিহাব কবির নাহিদের বোন নুসরাত জাহান।
ভাইয়ের খুনের বিচার চেয়ে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তার নিজের ফেসবুক আইডির এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি। পোস্টে নুসরাত লিখেন, আমার একমাত্র ভাই শিহাব কবির নাহিদ আজ কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে। আমার ভাইকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে মিথ্যা ও অপপ্রচার করা হচ্ছে।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজার শহরের বিমান ঘাঁটির কাছে পৌরসভার সমিতিপাড়ায় বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য উচ্ছেদচেষ্টাকে কেন্দ্র করে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নিহত হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
নিহত নাহিদ কক্সবাজারের পিটিআই এর সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট নাছির উদ্দীন ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা আমেনা বেগম দম্পতির ছেলে এবং পেশায় ব্যবসায়ী।
সমিতিপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ‘চলমান উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী যুবক চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার থেকে আইন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষিত জাহেদকে বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় বিমান বাহিনী। সোমবার দুপুরে বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য এলাকাবাসীকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে বিমান বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর প্রতিনিধিদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য বেলা ১২টার দিকে সমিতিপাড়ার বাসিন্দা মো. জাহিদসহ আরও কয়েকজন ইজিবাইকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আসছিলেন।
এসময় কক্সবাজার সমিতি পাড়া সড়কের ডায়াবেটিস পয়েন্টস্থ বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় জাহেদের সাথে প্রথমে তর্কাতর্কি হয়। পরে তাকে মারধর করে বিমান বাহিনীর বাউন্ডারির ভিতরে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এ খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে, সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ করে রাস্তায় নামে। প্রতিবাদ মিছিল সামনে এগুলো বাঁধা দেয় বিমান বাহিনী। হাতাহাতির এক পর্যায়ে বিমান বাহিনীর ছোড়া গুলিতে নিহাদ নিহত হয়। বিমান বাহিনীর সাথে এটিই প্রথম ঘটনা না, ২০০৭ সালেও তাদের সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল।’
তারা অভিযোগ করেন, বিমান বাহিনীর সদস্যরা এলাকাবাসীকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি করলে কমপক্ষে ১০-১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বাকিদের বিমানবাহিনী তুলে নিয়ে গেছে অভিযোগ করছেন তারা।
জানা যায়, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির জন্য পৌরসভার ১ নং ওযার্ডের সরকারি খাস জমি অধিগ্রহণ করে বিমান বাহিনী। সেই লক্ষ্যে ১৫ বছর আগে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের তালিকা তৈরি করা হয়। এরই মধ্যে প্রায় দেড় হাজারকে পরিবার সদর উপজেলার খুরুশকুলের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে বাহিনী। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ১ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী প্রায় ৩০ হাজার লোক বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। তারা ১নং ওয়ার্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের দাবি তুলে মানববন্ধনসহ প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি দেন।
এবিষয়ে কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা যুবদল নেতা দিদারুল ইসলাম রুবেল বলেন, ‘বিমান বাহিনী আজ আমাদের উপর নারকীয় হামলা চালিয়েছে। তবে তাদেরকে সাফ জানিয়ে দিতে চাই আমাদের জান গেলেও আমাদের বাপ দাদার ভিটেমাটি ছাড়ব না।’
এ ঘটনায় একজন নিহত এবং পাঁচ জন চিকিৎসাধীন থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পুলিশ বক্সের কর্তব্যরত ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম।
সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনায় একজন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে তা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার জন্য ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতিপাড়ার স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্তকে দায়ী করা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় স্থানীয় এক যুবক নিহতের ঘটনায় বিমান বাহিনীর সদস্যদের অভিযুক্ত করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলেও দাবি করেছে আইএসপিআর।
আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন, যার মধ্যে বিমান বাহিনীর ৪ জন সদস্য রয়েছেন। এছাড়া শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আইএসপিআরের দাবি, বিমান বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। তবে স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে যুবক নিহত হয়েছে বলে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়।
অন্যদিকে আইএসপিআরের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন এলাকাবাসী। এসময় তারা বিমান ঘাঁটিতে হামলা কিংবা ভাঙচুর করেনি বলে দাবি করে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।
পাঠকের মতামত